ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
সরকারি টাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইটভাটায় যাতায়তের জন্য ব্রীজ নির্মাণ, নিম্নমানের নির্মাণ কাজ ও বনবিভাগের জমি দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ভালুকা উপজেলার ৬নং ভালুকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সম্প্রতি দায়ের হওয়া বনের গাছ চুরির মামলা থেকে রক্ষা পেতে নিজস্ব লোকজন দিয়ে মানববন্ধন করানোর গুঞ্জন উঠেছে জনমনে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বেও চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খান ছিলেন একজন দর্জি দোকানদার। বর্তমানে তিনি পাজেরো গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করেন। ইতিপূর্বে তিনি হবিরবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির ৪৮নং সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে আ’লীগের অনুপ্রেবশকারী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। ১৬ মে বনের জমি থেকে গাছ চুরির অভিযোগে থানায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। আর ওই মামলা থেকে রক্ষা পেতে বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে তিনি মানববন্ধন করিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, হবিরবাড়ি বাজারে সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার দুই দিন হাটবার ছিলো। ওই বাজারের বটতলায় শিহাব আমিন খান বসে প্রতি লুঙ্গী ২টাকা করে সেলাই করতো। দর্জি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ দুঃসাধ্য হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে ছাগল ও গরু পালন শুরু করেন বনবিভাগের জমিতে। সেই নিম্ন আয়ের মানুষটি বর্তমানে পাজেরো গাড়ি দিয়ে চলাচল করেন। ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১০নং হবিরবাড়ি ইউনিয়নের অনুমোদিত কমিটিতে শিহাব আমীন খান ৪৮নম্বর সদস্য হয়েও ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে ২০১৫ সালে ৬নং ভালুকা ইউপি পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেস্ট সার্ভিস লিমিটেডের কাছ থেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য কস্ট্রাকশনের কাজ নিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় নির্মাণাধিন ভবণের বিশাল ছাদ ধসে পড়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। প্রায় ৪ঘন্টা চেষ্টা করে ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় শিহাব আমিন খানসহ মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় মামলা হয়। উপজেলার বাইিরপাথার এলাকার লাঙ্গল হাতায় নিজের ইট ভাটায় যাওয়ার যাতায়াতের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাড়িঘর ছাড়া লোকজনের কোনো যাতায়াত না থাকলেও ২০লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রীজ নির্মাণ করেন। উপজেলার মেহেরাবাড়ি মৌজার ১৫০ নং দাগে মেহেরাবাড়ি-বাশিল পাকা রাস্তা ঘেঁষে আকাশমনি বাগানের ভেতর বিশাল এলাকাজুড়ে চেয়ারম্যান শিহাব আমীন খান ও তার ছেলে মাহদী হাসান খান তাদের নিজস্ব ভ্যাকো ও ড্রামট্রাক দিয়ে রাতের আঁধারে মাটি ফেলে বনবিভাগের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের চেষ্টা চালান। পরে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ওই চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বনআইনে মামলা হয়। এ ছাড়াও মেহরাবাড়ি মৌজার ৭৪নং দাগে বন বিভাগের ১৫বিঘা জমি জবর দখল করে গরু, ছাগল ও পোল্ট্রি ফার্ম করেছেন। মেহেরাবাড়ি ও বাশিল এলাকায় বনবিভাগের জমিতে মাটি কাটার ঠিকাদার হচ্ছেন তার ছেলে মাহদী হাসান খান। তার ছেলের দাপটে অন্য কোনো ঠিকাদার এলাকায় প্রবেশ করতে পারেন না।
১৬ মে বনের জমি থেকে গাছ চুরির অভিযোগে বনবিভাগ শিহাব আমিন খান ও তার ম্যানেজার সুরুজ মিয়াসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের নামে মডেল থানায় মামলা রুজু হয়। আর ওই মামলা থেকে রক্ষা পেতেই আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মানববন্ধন করিয়েছেন।
চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খান জানান, আমি সহায় সম্পদ ব্যবসা করেই করেছি। মেহেরাবাড়ি মৌজার ১৫০নং দাগের জমিটি আমার মায়ের নামে। স্থানীয় বনবিভাগ আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিলো। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় গাছ চুরির মামলা করেন।
ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, শিহাব আমিন খানের বিরুদ্ধে গাছ চুরিসহ বনের একাধিক মামলা রয়েছে এবং মামলাগুলো বর্তমানে চলমান আছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, গাছ কাটার ঘটনায় শিহাব আমিন খানসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
অন্যদিকে বনের গাছ চুরির অভিযোগে চেয়ারম্যান শিহাব আমিন খানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার ৫দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এজাহারভুক্ত কোনো আসামীকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।