সোহাগ রহমান :
আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ওই ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই ব্যাপক আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে মাইকে গান বাদ্য বাজিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পাড়া মহল্লার রাস্তা-ঘাট, গাছ-গাছালিতে। দিন যতোই গড়াচ্ছে, নির্বাচন যেনো ততোই কাছে চলে আসছে। থেমে নেই কোনো প্রার্থীরা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের প্রতীকে ভোট ও দোয়া চাইছেন। সেই সাথে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতিও। প্রার্থীরা চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার এগারো ইউনিয়নেই দলীয় মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। ভোটাররা আরও জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক ব্যক্তি সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছেন। সম্ভাব্য ওইসব প্রার্থীরা স্ব স্ব ইউনিয়নে রাজনৈতিক কর্মসূচি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ খরচ করেছেন। পরবর্তীতে মনোনয়ন না পেয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি তাদের ক্ষোভও বেড়েছে দ্বিগুন। কোনো কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া মনোনয়ন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মাঝেও অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, হবিরবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম রিপন, সাবেক কৃষকলীগ নেতা মাজাহারুল আনোয়ার সোহেল খানসহ একাধিক নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন। এতেকরে দলীয় ভোটে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইখানে বিএনপির কতিপয় নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির নেতারা মনে করছেন ঘোষণা দিয়ে বিএনপি এই নির্বাচনে না আসায় সরকার ইউপি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছেন এবং ৫ম ধাপের শেষ হওয়া নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় ৬০ ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। আর ৬ষ্ঠ ধাপের এই নির্বাচন যদি একই পথ অনুসরণ করে তাহলে বিএনপির ভোট ও ব্যক্তির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।
১০নং হবিরবাড়ী ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতীক) মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, ৬ষ্ঠ ধাপের এই নির্বাচনটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে আমি বিজয়ী হবো।
৭নং মল্লিকবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) আলহাজ¦ এস এম আকরাম হোসাইন বলেন, গত ৫টি বছর আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি। সফল চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার আমাকে স্বর্ণপদকে সম্মানিত করেছেন। ব্যক্তি হিসেবেও ভোটারদের কাছে আমি খুবই জনপ্রিয়। ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আমাকে বিজয়ী করবে।
৩নং ভরাডোবা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (চশমা প্রতীক) মোঃ বজমুল সরকার বলেন, ইউনিয়নের ছাত্র ও যুব সমাজের সাথে আমার দারুন সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমার পক্ষে কাজ করবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জয়ী হওয়ার আশা রাখি।
২নং মেদুয়ারী ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) আকতার হোসেন সরকার বলেন, আমি করোনাকালে হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের খাদ্য সহায়তাসহ আর্থিক সাহায্য করেছি। এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করেছি, নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয় আমারই হবে।
১নং উথুরা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) মোঃ এছাহাক আলী বলেন, নির্বাচনে যদি কোনো কারচুপি করা না হয়, ভোটাররা যদি সুন্দর ভাবে ভোট দিতে পারে, তাহলেই আমার বিজয়।
এদিকে পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মিলটন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। দল এই নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এই নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের কথা চিন্তা করে অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা।
অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ সিনিয়র নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আওয়ামীলীগের লোক, অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বও পালন করছি। তবুও হবিরবাড়ী ইউনিয়নে নৌকার কর্মী সমাবেশে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাই বলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আমি পিছপা হবোনা। গভীর রাত পর্যন্ত আমি নির্বাচনী এলাকায় নৌকা মার্কার ভোট চাইছি। ইনশাআল্লাহ নৌকাই জয়ী হবে।
আগামী ৩১ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের কাঙ্খিত জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচন করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা সাধারণ ভোটারদের।