খালিদ হাসান :
ঝিনাইদহে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার গবাদি পশু। তাই এবারের কোরবানিতে পশু সংকট হবে না বলে মনে করছে প্রাণী সম্পদ বিভাগ। তবে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খামারিরা।
জানা গেছে, এ বছর জেলার ছয় উপজেলায় ৭৯ হাজার ১৭৫টি গরু ও ৫২ হাজার ৩২৮টি ছাগল কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে। করোনাকালে অনেকে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে এসে বাণিজ্যিকভাবে খামার করেছেন। সেসব খামারে প্রস্তুত রয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা মূল্যের এসব কোরবানির পশু।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহ জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০২টি। গত বছর জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০২টি কোরবানি করা হয়। গতবারের সংখ্যাটিই কোরবানির চাহিদা হিসাবে ধরা হয়েছে। পশু কোরবানি দিয়ে প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের মত পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। যা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হবে।
শহরের নতুন কোটপাড়ার মহিউদ্দীন নামে এক খামারি বীরযোদ্ধা ডট কমকে জানান, সাধারণত ঝিনাইদহে অন্য জেলা থেকে কোরবানির গরু ছাগল আসে না। কিছু সৌখিন মানুষ আছেন যারা মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও উট কিনে আনেন। গত বছর ঝিনাইদহে গরু ও ছাগল ছাড়াও এমন ৬৪২টি পশু কোরবানি হয়েছিল।
হরিণাকুন্ডুর হাফিজুর রহমান বীরযোদ্ধা ডট কমকে জানান, ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা কারণে লকডাউন শুরু হলে প্রভাব পড়ে মানুষের ব্যবসা ও চাকরির উপর। অনেকেই চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে পশু পালন শুরু করেন। তিনিও চারটি পশু কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। বাজার ঠিক থাকলে লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, পশু খাবারের দাম বেশি হওয়ায় ঋণ ও ধার-দেনা করে খামার করেছেন। কোরবানির ঈদকে সামনে করে পশুর বাজার ঠিক থাকবে কিনা এ নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। বাজার পড়ে গেলে ঝিনাইদহের শত শত খামারি পথে বসবে বলে তিনি মনে করেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের বেতাই গ্রামের সানা মুসল্লীর ছেলে রুবেল মুসল্লী ঈদের বাজার টার্গেট করে গরু মোটাতাজা করেছেন। একটি গরু ইতোমধ্যে ব্যেশ ভালো দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখনো তার খামারে একাধিক গরু রয়েছে। চলমান লকডাউন ও ঈদে পশুর হাট বন্ধ থাকলে পশু কেনাবেচা নিয়ে তার মতো অনেকেই শঙ্কিত।
গান্না বাজারের ইজারাদার নিলুয়ার জোয়ার্দার জানান, কোরবানির ঈদের আগে সবারই কম বেশি টার্গেট থাকে। কিন্তু এ বছর লকডাউনের কারণে হাট বসছে না। বাইরে থেকে ক্রেতা বা ব্যাপারীরা আসছে না। যার কারণে হাট ইজারা নিয়ে আমরা বিপদে আছি।
নারিকেলবাড়িয়া বাজারের ইজারাদার অলিম্পিক হোসেন বীরযোদ্ধা ডট কমকে জানান, ঈদ সামনে করে পশুর হাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত খোলা স্থানে বসানো যায় কিনা তা বেবে দেখা দরকার।
ঝিনাইদহ জেলা প্রণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আনন্দ কুমার অধিকারী বীরযোদ্ধা ডট কমকে জানান, ঝিনাইদহ জেলায় কোরবানিতে যে পশুর চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের মতো গরু ও ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। সেইগুলো ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে আশা করা যায় ঈদের আগে খামারিরা এবং বাজারের ইজারাদারেরা যাতে বাজার ধরতে পারে সে বিষয়ে কার্যকরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার। আমারাও সে রকম পরামর্শ দিয়েছি।