খালিদ হাসান, ঝিনাইদহ
ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। তেলের দামে লাগাম টানতেই যেন গোপন আয়োজন চলছে কৃষকপাড়ায়। তারই অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চাষ করছেন সূর্যমুখী ফুল।
মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী। সবুজের মধ্যে হলুদ ফুলগুলো অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে। সূর্যমুখী দেখতে যেমন অপরূপ, গুণেও অনন্য। বাংলাদেশের আবহাওয়া, পানি ও মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীর তেলে তেমন নেই। বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান মিয়া।
গুনগতমান ও স্বাস্থ্যম্মত তেল পাওয়ার আশায়ই ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সবার আশা, ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে সূর্যমুখী একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ নতুন। এখনও সেভাবে তেলের উৎপাদন শুরু হয়নি। বাজারে এখন সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা লিটার দরে। তবে এগুলো সব বিদেশ থেকে আমদানি করা। এটা সূর্যমুখীর তেল কি না, সে বিষয়েও সংশয়ের কথা জানালেন অনেকেই। তাঁদের আশা, যদি দেশেই সূর্যমুখীর আবাদ হয়, তাহলে অনেক কম দামেই সূর্যমুখীর তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে মানুষের অনেক সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা কমে যাবে।
উপজেলার বাবরা গ্রামের সেলিম বিশ্বাস, রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল মালেক, একই গ্রামের শাহীনুল ইসলাম, আলাইপুর গ্রামের সাহেব আলী, বানুড়িয়া গ্রামের সবজেল হোসেন, পিরোজপুর গ্রামের রবিউর ইসলামসহ একাধিক কৃষকের ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটে আছে সূর্যমুখী ফুল। শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছেন সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। মানুষের এই ঢল বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের জন্য।
তারা সকলেই জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাদের সূর্যমুখী চাষ করতে বীজ, সার, একটা বিলবোর্ড এবং অন্যান্য পরিচর্যা করার জন্য কিছু নগদ অর্থ ও দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে জানিয়েছে সূর্যমুখী উৎপাদনেরপর নিজের প্রয়োজনীয় সূর্যমুখী রাখারপর বাকিটুকু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাজার মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে নিবেন। এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলাতে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে । তার মধ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রায় ৩৭জন কৃষকের ৩৭ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করার জন্য বীজ, সার ও ক্ষেত পরিচর্যার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেন। সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এর তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। ভিটামিন ই ও ভিটামিন কের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল খুবই নিরাপদ।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান মিয়া জানান, আমরা খাদ্যের দিক থেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ কিন্তু মসলা জাতিয় ফসলের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে মসলা জাতিয় খাদ্য আমাদের বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয় । সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সূর্যমুখী চাষের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।